মোঃ আজগার আলী,সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: সাতক্ষীরা আশাশুনির ১০নং প্রতাপনগর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড হিজলিয়া ( ঘোলা ত্রিমুহনী ) সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সাইক্লোন কেন্দ্রটির কাজে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। দ্বায় সারা ভাবে দ্রুতগতিতে কাজটি শেষ করতে চাই।
সরেজমিনে গত শুক্রবার স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, স্কুলের ভবনটির অধিকাংশ পিলার গুলো বাঁকা। বিম গুলোর মধ্য থেকে রড বাহির হয়ে আসছে। বিম ঢালাইয়ের অনেক জায়গায় শুধু বালি দেখা যায়। দুইজন ভবনটির প্লাস্টারের কাজ করছে। ছাদ না কুপিয়ে প্লাস্টার করছে খুব পাতলা আবরনে। ঠিকাদার বা স্কুল কমিটির কেউ ছিল না। কর্মরত ব্যক্তি দুজনের কাছে জানতে চাইলে উত্তরে জানাই, ঠিকাদার মাঝে মধ্যে আসে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ ইয়াসিন আলী আকুন্দির উপর সব দায়িত্ব, তিনি সব কিছু দেখাশুনা করেন। ঠিকাদার আবুল কালাম মাসে দুদিন বিকালে এসে প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে চলে যান।
স্থানীয় হাফিজুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ৬নং ওয়ার্ড হিজলিয়া এবং কোলা দেড় কিলোমিটারের ভিতর কোলাতে একটি আশ্রয় কেন্দ্র আছে। হিজলিয়ায় সর্বশেষ এই একটি আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণাধীন। আমরা দেখছি এই স্কুল ও আশ্রয় কেন্দ্রটি ব্যাপক দুর্নীতি অনিয়মের মধ্যে তৈরী হচ্ছে। জেনেছি এই প্রকল্পটির বাজেট এক কোটি বাইশ লক্ষ টাকা, কিন্তু প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার পথে, দেখলে মনে হয় ত্রিশ থেকে চল্লিশ লক্ষ টাকার কাজ হয়েছে। প্রথম তলায় দুটিরুম একটি বারান্দা, ২য় তলায়ও দুটিরুম একটি বারান্দা এবং একটি সিড়ি। তিনি বলেন আপনারা সাংবাদিক ভাইয়েরা এই ভবনটি নিয়ে লেখালেখি করেন তবে সরকারের উদ্ধতন কর্মকর্তাদের চোখে পড়লে দুর্নীতি বন্ধ হতে পারে।
স্থানীয় ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি আবু বক্কার সিদ্দিকি বলেন, ভবনটি যখন শুরু হয় আমরা জানি স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি আছে এবং ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকসহ কমিটি সম্পুর্ন দ্বায়দায়ীত্বে দেখাশোনা করবে। আমরা এলাকাবাসী একদিন স্কুলে যেয়ে দেখি সম্পুর্ন অনিয়ম ভাবে আটসিসি করা প্লিয়ার বাঁকা, তড়িঘড়ি করে প্লাস্টার করে ঢেকে দিচ্ছে। এলাকাবাসী প্রধান শিক্ষককে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। পরবর্তীতে প্রধান শিক্ষক মসজিদে মসজিদে বারবার ঘোষণা করেন স্কুলটার দিকে আপনারা খেয়াল করেন, আমরা এলাকাবাসী প্রধান শিক্ষকের কাছে সিডিউলটা চাইলে তিনি বলেন, সিডিউল আমার কাছে নাই, আমাকে দেয় না বা কন্টাক্টরও দেয় না। আমরা তাকে বলি, দুর্নীতি হচ্ছে কাজটি বন্ধ করে দিন, কিন্তু প্রধান শিক্ষক এলাকাবাসীর কথা না শুনে নিজের ব্যক্তিগত ইচ্ছাতে তড়িঘড়ি করে উক্ত প্রকল্পের কাজটি শেষ করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ছোট বাচ্চারা এই ভবনটিতে ক্লাস করবে, এমন দুর্নীতির মাধ্যমে কাজটি শেষ হইলে যে কোন সময় বাচ্চরা দুর্ঘটনায় পড়লে এর দ্বায়ভার সম্পুর্ণ স্কুল কমিটি, ঠিকাদার এবং প্রকৌশলীকে নিতে হবে।  পরে উনি না শোনায় মানবাধিকার কল্যাণ সংস্থার সাতক্ষীরা শাখাতে অভিহিত করলে সাংবাদিক ও মিডিয়া স্কুলে এসে প্রধান শিক্ষকের বক্তব্য নেয়। আমাদের হিজলিয়ায় নির্মাণাধীন একটি ভবন, আমরা এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরে নদী ভাঙ্গনে প্লাবিত,  আমাদের আশ্রয়কেন্দ্র একটি, কোন দুর্নীতি অনিয়ম না করে সুন্দর ভাবে ভবনটির কাজ সম্পর্ণ হয় সেটা আমরা কামনা করি। তিনি সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
আমাদের প্রতিবেদক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ ইয়াসিন আলী আকুন্দির কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,  আমি শুধুমাত্র দেখাশুনা করছি। প্লিয়ার বাঁকার কথা জানতে চাইলে উনি প্রকৌশলী এবং ঠিকাদারকে দোষারোপ করে বলেন, ভাইব্রেশন মেসিনের চাপে পিলার গুলো বেঁকে গেছে, তাদের দেখার দ্বায়ীত্ব আমার নয়। প্রকল্পের বরাদ্ধ এক কোটি বাইশ লক্ষ টাকা। বর্তমান ব্যয়ের কথা জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান, বলেন আমি জানিনা বলে পালিয়ে যান।
ঠিকাদার আবুল কালামের মুঠো ফোনে  জানতে চাইলে প্রতিবেদকের উপর চড়াও হয়ে বলেন, আমার কাজ ঠিক আছে, আমি কাউকে কৈফিয়ৎ দিয়ে কাজ করি না, আপনারা লেখালেখি করেন আমার কোন কিছু করতে পারবেন না, আমার উপরে লোক আছে বলে ফোন কেটে দেয়।
সরকারি প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বাপ্পি মুঠো ফোনে বলেন, আপনাদের দেখার ভুল আছে, কোন বিম বাঁকা হয়নি, সব ঠিক আছে। আপনার বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর অভিযোগ আছে ঠিকমতো আসেন নাই, উত্তরে বলেন প্রধান শিক্ষকের কাছে জানেন প্রতি ঢালাইতে আমি উপস্থিত ছিলাম।
এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০২২ ইং সালের জুনে, কিন্তু কয়েক মাস কাজ বন্ধ থাকার পর আবার ২০২২ ইং নভেম্বর থেকে কাজ একটানা চলে আসছে, প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২২ ইং সালের ডিসেম্বরে, তবে তার মেয়াদ বৃদ্ধি করে ৩১শে মার্চ ২০২৪ ইং করা হয়েছে।